Know more about
Who we are
চন্দননগর ও ভদ্রেশ্বর এর ঐতিহ্যবাহী জগদ্ধাত্রী পুজোর খ্যাতি বিশ্বময়, এই উৎসবের আলোয় আলোকিত সারা জগৎ। যে পূজা কমিটিগুলি এই উৎসবমুখর মাতৃ আরাধনায় সামিল,তার মধ্যে অন্যতম পরিচিত বাবুরবাজার সার্বজনীন জগদ্ধাত্রী পূজা কমিটি।
ভদ্রেশ্বর এলাকার জিটি রোড সংলগ্ন এই সবুজ প্রাঙ্গনে ১৯৭৪ সালে এই কমিটির জন্মলগ্ন থেকে প্রতি বছর আমরা নিষ্ঠার সাথে জগতজননীর আবাহনে ব্রতী। হৈমন্তিক উৎসবের নব রঙে নব রূপে কখনো শিল্পকর্মের ছোঁয়ায় ভরা মন্ডপসজ্জা, নয়নাভিরাম মাতৃপ্রতিমা, কখনো দৃষ্টিনন্দন আলোকসজ্জায় বা কখনো আকর্ষণীয় শোভাযাত্রার টানে অসংখ্য মানুষ এই সমারোহে সামিল হন।
শরতের উজ্জ্বল আকাশ নীলিমায় ছোট ছোট মেঘের ভেলা নিরুদ্দেশের উদ্দেশ্যে বাতাসে বয়ে চলেছে । উদাস শিউলি ফুলের গন্ধে গৃহ প্রাঙ্গণ অনুমোদিত, আকাশে বাতাসে আনন্দ হিল্লোল প্রবাহিত, আনন্দময়ীর আগমনের অপেক্ষায় ঘরে ঘরে বহে আনন্দের জোয়ার, আজ থেকে ৫০ বছর আগে এমনই এক শুভ লগ্নে আমাদের এই মহা জগধাত্রী পূজা শুরু হয়েছিল ।
আমাদের এই জগধাত্রী পূজা ১৯৭৪ সালে স্থাপিত হয়ে বিভিন্ন ঘাত প্রতিঘাত অতিক্রম করে দীর্ঘ ৫০ বৎসরে পদার্পণ করল । আজ এই পূজার স্মৃতিচারণ করতে বসে অনেক কথাই মনে পড়ে ।
প্রথম পূজা হবে এই উপলক্ষে সমস্ত প্রতিবেশীদের নিয়ে একটা বড় সভা অনুষ্ঠিত হয়েছিল , উদ্যোক্তা হিসেবে যারা ছিলেন তাঁরা অনেকেই আজ আমাদের মধ্যে নেই কিন্তু তাঁদের অক্লান্ত পরিশ্রম প্রচেষ্টার ফল স্বরূপ আজ এই জগধাত্রী পূজা উৎসব । তাই তাঁদের মহান আত্মার প্রতি জানাই সশ্রদ্ধ প্রণাম, সেই সভায় সেদিন স্থির হয়েছিল বাবুরবাজারে জগধাত্রী পূজা হবে এবং কে কিভাবে কাজ করবেন ও সাহায্য করবেন । আজ বলতেই হয় সেদিন যে আনন্দের মহড়া আমাদের মধ্যে প্রবাহিত হয়েছিল তা আজকের চেয়ে কোন অংশে কম ছিলনা বরং একটু বেশি ছিল বলতে হয়, সেদিন থেকেই প্রত্যেকে একাত্ম হয়ে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল পূজা অনুষ্ঠানটিকে সফল রূপ দেওয়ার জন্য ।
প্রথম শুরু থেকে বেশ কয়েক বছর আমাদের এই পূজা সাধারণ প্যান্ডেল দিয়ে অনুষ্ঠিত হয় পরে পরিবর্তনশীল সমাজ ও সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে আমাদের পূজার পরিবর্তন হয়েছে । আমাদের প্রতিবেশীগণের ও কর্মীগণের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় তৈরি হয়েছিল নানারকম কারুকার্য প্যান্ডেল ও আলোক সজ্জা সমারোহ । এত পরিবর্তন এর মধ্যেও আমাদের পূজা বা মাতৃ আরাধনার কিন্তু পরিবর্তন হয়নি । মাতৃআরাধনা বা পূজার জন্যই যে পূজা, সেটা কিন্তু প্রথম থেকে আজ পর্যন্ত একইভাবে চলে আসছে । পূজা বলতে যা বোঝায় -তা আমাদের এখানে পূজার পুরোপুরি বজায় থাকে । যার ফলস্বরূপ আমাদের জগধাত্রী পূজা সকলের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে, এটা আমাদের কাছে খুবই আনন্দের ও গর্বের ব্যাপার । আমাদের পূজা কমিটির সমস্ত সদস্য, সদস্যা, অধিবাসীবৃন্দ এবং এলাকার সমস্ত ছোট ছোট ছেলে এবং মেয়ে এদের সকলের নিরলস পরিশ্রম ও সহযোগিতার ফলস্বরূপ আজ ৫০ বৎসরে পদার্পণ করল । সত্যই এদের পরিশ্রম বা উদ্যোগের কোন বিকল্প নেই -এদের সকলকে জানাই আমাদের আন্তরিক অভিনন্দন ।
গত কয়েক বছরের করোনা মহামারীর আতঙ্ক এই উৎসবের আনন্দকে মলিন করতে পারেনি, তাও সমস্ত বিষাদ ভুলে নতুন স্বপ্ন বুনে পায়ে পায়ে আমাদের সুবর্ণ জয়ন্তী বর্ষে পদার্পণ। নবারুণের স্বর্ণালী কিরণে নব নব প্রয়াসে আমাদের সুবর্ণ জয়ন্তী বর্ষের এই উদযাপন। মাতৃবন্দনার এই আনন্দযজ্ঞে সকলের আমন্ত্রণ।